প্রকাশিত: ২৯/১০/২০১৫ ২:২৮ অপরাহ্ণ
রাঙামাটিতে আসামবস্তী বুদ্ধাংকুর বিহারে দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব

download (2)
জুঁই চাকমা,রাঙামাটি ::
ধর্মীয় নানা আচার অনুষ্ঠানে মধ্য দিয়ে রাঙামাটির আসামবস্তী বুদ্ধাংকুর বিহারে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার দুপুরে ২টায় বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহার ও রাঙামাটি বড়ুয়া জনকল্যাণ স্ংস্থার উদ্যোগে দু’দিনব্যাপী ১৬তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসবে আয়োজিত ধর্মসভায় সভাপতিত্ব করেন সংঘরাম বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ও রাঙামাটি পৌর ভিক্ষু সংঘের সভাপতি ভদন্ত শ্রদ্ধালংকার মহাথের।

দু’দিনব্যাপী ১৬তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসবের উদ্বোধন করেন রাঙামাটি বড়–য়া জনকল্যাণ সংস্থার প্রধান উপদেষ্ঠা নীহানেন্দু তালুকদার। ধর্মালোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহারের সভাপতি ও সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সুপ্রিয় বড়ুয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে বিশিষ্ট ব্যববসায়ী ও সমাজ উন্নয়ন কর্মী আব্দুল মতিন, অলক প্রিয় চৌধুরী, দিপক বড়–য়া, রণজিৎ বড়–য়া, অশোক বড়–য়া, হারাধন বড়–য়া,অরুন বড়–য়া, ছোটন বড়–য়া, রিটু বড়–য়া। স্বাগত বক্তব্য ও অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহার ও রাঙামাটি বড়–য়া জনকল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়–য়া।

ধর্মালোচনায় সভায় বক্তারা বলেন, ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাস করছে, ধর্মের নামে সংর্ঘষ বাড়াচ্ছে এবং সারা পৃথিবীতে মানব জাতীর মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করছে তারা কোন দিন নির্বাণ লাভ করতে পারবে না। কারণ ক্ষমা ও মৈত্রী ভাব যার আছে সে জ্ঞানী। আর জ্ঞানী ব্যক্তি হিংসা ও সংর্ঘষ থেকে দূরে থাকে। তাই পঞ্চশীল গ্রহণ করে বুদ্ধের বাণীগুলো যথাযথ ভাবে অনুসরণ করে সংঘাত পরিহার করে মৈত্রী ভাবনা চর্চা করার আহবান জানান।

বক্তারা আরো বলেন, আমরা যদি ঠিক না থাকি তা হলে এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক থাকবে না। ধর্মীয় আচার, আচরণ ও রীতিনীতি যদি ঠিক রাখি তাহলে আমাদের সামাজিকতা সুদৃঢ় হবে এবং সমাজে শান্তি ফিরে আসবে। সঠিকভাবে ধর্ম চর্চা আর ধর্মের প্রতি অবিচল বিশ্বাস রেখে আর্থিক উন্নয়ন ঘটাতে হবে। গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা ও আদর্শের প্রতি সকলকে আদর্শবান হয়ে মিথ্যাকে পরিহার করে সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যেতে হবে। তা হলেই পার্বত্যাঞ্চলে উন্নয়ন ও শান্তি ফিরে আসবে।

অনুষ্ঠানে আগত পূর্নার্থীদের উদ্দ্যেশে প্রধান ধর্মদেশক হিসেবে দেশনা পাঠ করেন বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার মহাসচিব ও চান্দগাঁও সাক্যমুনি বিহারের অধ্যক্ষ এস, লোকজিৎ থেরো।

এর আগে কঠিন চীবর দান উপলক্ষে বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহারে ভোর থেকে কর্মসূচির সূচনা করা হয়। ভোরে প্রার্থনা ও সূত্র পাঠের মাধ্যমে উৎসবের কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল ভোর ৪টায় পরিত্রাণ পাঠ, সকালে পুষ্পপূজা ও ভিক্ষুসংঘের প্রাতঃরাশ, জাতীয় পতাকা ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, বুদ্ধপূজা, শীলগ্রহণ, উপগোপ্ত বৌদ্ধের বৌদ্ধমুত্তীদান, সংঘদান ও ভিক্ষুসংঘের ধর্মদেশনা, অনুত্তর পুণ্যাক্ষেত্র ভিক্ষুসংঘকে পিন্ডদান। দ্বিতীয় পর্বে ছিল দুপুর ১.৫০মি: “বুদ্ধাকুর স্বরণিকা” নামক সংকলনের মোড়ক উম্মোচন, ধর্মীয় আলোচনা ও কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে শত শত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া সন্ধ্যা ৬টায় ফানুস বাতি উড্ডয়ন, মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জালন ও বৌদ্ধ কীর্ত্তন অনুষ্ঠিত হয়।

পাঠকের মতামত